চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে এক বছরেও চালু হয়নি ডিজিটাল নিরাপত্তা বেষ্টিত ইলেকট্রনিক গেট (ই-গেট)। সংস্থাটিতে কর্মকর্তার কক্ষে প্রবেশ করে নথি চুরি, সফটওয়্যার হ্যাকের চেষ্টার ঘটনার পরও নিরাপত্তার এ ইস্যুতে চুপচাপ কর্তাব্যক্তিরা। তাদের ‘সহযোগী’ হিসেবে কাজ করা বহিরাগতদের আগলে রাখতেই এসব নিয়ে গড়িমসি করছেন বলে চাউর রয়েছে। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, আইটি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পরিশোধ করে দুয়েকমাসের মধ্যেই চালু হবে ই-গেট।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ঘুরে দেখা গেছে, সংস্থাটির নিচ তলার প্রবেশমুখের ডান পাশে দুইটি ও বাম পাশে দুইটি গেট বসানো। সেখানে নেই কোনো নিরাপত্তাকর্মী। গেট দিয়ে হরদম মানুষ ঢুকছে আর বের হচ্ছে। এরআগে দীর্ঘদিন গেট চারটি কাগজ আর পাতলা পলিথিন মোড়ানো ছিল।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ‘ই-গেট’ দিয়ে কার্ড পাঞ্চ করে প্রবেশ করতে গত বছরের ১৭ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রক্সিমিটি কার্ডের জন্য সিএন্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্ট, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট, কাস্টমস সরকারসহ (সিএন্ডএফ এজেন্ট এর কর্মচারী) সকল স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে আবেদন সংগ্রহ করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কার্ড ছাড়া ১৫ অক্টোবরের পর কাস্টম হাউসে প্রবেশ করা যাবে না বলেও হুঁশিয়ার করে কর্তৃপক্ষ। তবে শেষমেশ আর গেট চালু হয়নি।
চট্রলার কণ্ঠকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়শনের একজন সদস্য বলেন, ‘লোকবল সংকটের অজুহাতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের প্রায় প্রতিটি শাখায় বহিরাগত লোক কাজ করে। এসব বহিরাগতরা নিজেদের কাস্টমসের কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন শাখায় ঘুরে বেড়ায়। এরা মূলত বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগী হিসেবে কাজ করে, ঘুষ লেনদেনে সহায়তা করে। গেটগুলো চালু হলে আমাদের এসব অযাচিত হয়রানি কমে যেত।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাস্টমসের এক কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে স্মার্ট কার্ড ব্যবহৃত গেট বসানো হয়েছে। চালু করা না হলেও আমার জানা মতে যারা যারা প্রবেশ কার্ড পাবেন, তাদের তালিকা করা হয়েছে। সবধরনের প্রয়োজনীয় ডাটাও সংগ্রহ করা হয়েছে। আমার মনে হয়, গেটগুলো অ্যাক্টিভ করা জরুরি। কারণ এখানে এতো মানুষ আসে, সবাইকে চেনাও কারো পক্ষে সম্ভব না। তাই অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কে আসছে তা কারোরই জানার কথা নয়। এজন্য গেট চালু হলে, প্রয়োজনীয় মানুষগুলো প্রবেশ করার সুযোগ পাবে। এটাই হওয়া উচিত।’
এ গেট আদৌ চালু হবে কিনা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র ও উপ-কমিশনার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘গেটের কাজ করতে যে আইটি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে, তাদের কিছু বকেয়া আছে। বকেয়াগুলো দিয়ে গেট চারটি একসঙ্গে সচল করা হবে।’
গেট সচল হওয়ার পরবর্তী ব্যবস্থাপনা কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গেট সচল হলে সেখানে সিকিউরিটিরা দায়িত্ব পালন করবেন। যারা কার্ড হোল্ডার তাদের তো কোনো সমস্যা নেই। কার্ড পাঞ্চ করার মাধ্যমে তারা আসা-যাওয়া করবেন। আর যাদের কাছে কার্ড নেই, তাদের পরিচয় নিশ্চিত করে তাদের প্রবেশের জন্য সিকিউরিটি সাহায্য করবেন।’
বকেয়া পরিশোধ ও ডাটা ডেভলপম্যান্টে কতদিন সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে সবচেয়ে বড় সুবিধাটা হলো, এখানে কোনো চিঠি চালাচালির ইস্যু নাই। বকেয়া দেওয়ার পরই ডেভেলপম্যান্টের কাজ শেষ করা হবে। আশা করি, মাস দুয়েকের মধ্যেই এ গেটগুলো সচল করা সম্ভব হবে।’
উল্লেখ্য, কাস্টম হাউসে বহিরাগতদের উপদ্রব ঠেকাতে বারবার দাবি জানিয়ে আসছিল সিএন্ডঅ্যাফ এজেন্টরা। এরমধ্যে গত বছরের ৪ অক্টোবর সংস্থাটির উপ–কমিশনার নুর নাহার লিলির কক্ষের তালা ভেঙে নথি চুরি ও অপারেশন ম্যানেজারের কক্ষে ডিভাইস লাগিয়ে কাস্টমসের সফটওয়ার হ্যাকের চেষ্টার সময় আটক হয় দুই বহিরাগত। এরপরই তড়িঘড়ি করে ‘প্রক্সিমিটি কার্ড সিস্টেম গেট’ নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা বেষ্টিত ই-গেট বসানোর উদ্যোগ নেয় কাস্টমস। এরমধ্যে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের অর্থায়নে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে বসানো হয়েছে চারটি ডিজিটাল গেট।