ডিসেম্বর ৪, ২০২৪ ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ

চিকিৎসককে আসামী করে রাউজানের দুই আসামী কারাগারে

ফজলুল বারী।
চট্টগ্রামের রাউজান এলাকায় চাঁদা না পেয়ে চেম্বার থেকে তুলে নিয়ে জাহাঙ্গীর আলম নামে এক চিকিৎসককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় দুই আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। একই আদেশে অপর আরেকজনের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) চট্টগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কাজী সহিদুল ইসলাম এ আদেশ দেন। এর আগে, তারা আদালতে উপস্থিত হয়ে আত্মসমর্পণ করেন।
কারাগারে পাঠানো আসামিরা হলেন—পাইওনিয়ার হসপিটালের পরিচালক মনজুর হোসেন এবং সুপারভাইজার মো. জাহাঙ্গীর আলম। জামিনপ্রাপ্ত আসামি হলেন—হাসপাতালটির চেয়ারম্যান ডা. ফজল করিম ওরফে বাবুল।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাজমুল।

তিনি বলেন, ‘আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে ৮ সপ্তাহের জামিনপ্রাপ্ত হয়ে আজ বিজ্ঞ চিফ জুডিশিয়াল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাদের মধ্যে দুইজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ এবং পুলিশি প্রতিবেদন জমা পর্যন্ত অপর একজনকে জামিন দেন।’

এর আগে চলতি বছরের ২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভুক্তভোগী চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম (৫৫) মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন—রাউজান থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, উপপরিদর্শক (এসআই) টোটন মজুমদার, রাউজান থানার সাবেক এসআই শাফায়েত আহমদ।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়ার বাসিন্দা চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় পথেরহাটে তার পরিচালিত প্রাইভেট চেম্বারে (অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার) রোগী দেখছিলেন। এসআই টোটন মজুমদার তাকে বিএনপির কমিটিতে নাম থাকায় ক্রসফায়ার দেওয়ার হুমকি দেন; অন্যথায় বাঁচতে চাইলে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ সময় এসআই টোটন মজুমদার, এসআই শাফায়েত আহমদ, রাউজান থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলমকে চেম্বারে গিয়ে অপহরণ করে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেন।

অভিযোগে আরো বলা হয়, ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে নোয়াপাড়ার অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে তাকে সাদা পোশাকে অপহরণ করা হয়। এরপর তার মাথায় পিস্তল রেখে চিৎকার না করতে বলে এবং আসামিরা চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে মারধর করে। পরে এসআই টোটন মজুমদারসহ আসামিরা মিলে ২০১৫ সালে ৪ এপ্রিল তারিখের একটি মিথ্যা মামলা সাজায়। সেই মামলার প্রেক্ষিতে ১৫ এপ্রিল রাত ৮ টার দিকে গ্রেপ্তার করে প্রায় ৮ ঘণ্টা পর থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ আসামি পাইওনিয়ার হসপিটালের চেয়ারম্যান ডা. ফজল করিম ওরফে বাবুল সহায়তায় ওই মিথ্যা মামলার চার্জশিট দিয়ে মামলার বিচার নিষ্পত্তির জন্য ২০১৫ সালের ১৮ জুন সংশ্লিষ্ট গ্রাম আদালতে পাঠান।

তবে এর আগের দিন ১৭ জুন মামলাটির ভিকটিম মো. রাসেল শেখ ওরফে মো. রাসেল ড্রাইভার হলফনামায় উল্লেখ করেন— ‘প্রকৃতপক্ষে কথিত ওই ঘটনার তারিখে তার সাথে চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলমের দেখা হয়নি বা এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বাদী কেন ওই মামলাটি করেছে তার জানা নেই। এই বিষয়ে তাকে কোনো ডাক্তার পরীক্ষা করে নাই। তদন্তকারী কর্মকর্তা কোনো রকম জিজ্ঞাসাবাদও করে নাই।’

চলতি বছরের (২০২৪) ১৩ আগস্ট আসামি পাইওনিয়ারের সুপারভাইজার মো. জাহাঙ্গীর আলমও হলফনামা ঘোষণা করেন — ‘রাউজান থানার এসআই টোটন মজুমদার, সাবেক এসআই শাফায়েত আহমদ, তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশের আদেশে এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের চাপে পড়ে মিথ্যা মামলায় বাদী হিসেবে যুক্ত হন। ওই মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহার করলে তার কোনো আপত্তি নেই।’

২৯ আগস্ট গ্রাম আদালতে মামলাটি বাদী ও সাক্ষীর হলফনামা বিবেচনা করে এবং অভিযোগকারী পক্ষের অনুপস্থিতি ও মিথ্যা অভিযোগ হিসেবে প্রমাণ হওয়ায় খারিজ করা হয়।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সাম্প্রতিক