জনতার মেয়র খ্যাত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাক্তার শাহাদাত হোসেন মশা মারতে গতানুগতিক ওষুধের বাইরে গিয়ে নতুন ওষুধ ব্যবহারের পথে হাঁটছেন। আপাতত বিদেশি একটি ‘রিসার্চ প্রোডাক্ট’ দিয়ে এডিস মশার লার্ভা নিধনের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশ থেকেও ওষুধ সন্ধানের কথা জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) নগরের চকবাজার সিটি করপোরেশনের কাঁচা বাজারে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
চসিক মেয়র বলেন, ‘একই স্প্রে মারতে থাকলে মশা সেটায় অভ্যস্ত হয়ে যাবে। তার স্থায়িত্বকাল বাড়বে। এই মশা আর মরবে না। কাজেই নতুন নতুন কিছু উদ্ভাবন আমাদের ৩-৪ বছর পরপর করতে হবে। এটাতে ফল পাওয়া যাবে।’
নতুন একটি ওষুধের সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা একটি নতুন ওষুধ বের করেছি রিসার্চ প্রোডাক্ট। সেটা হচ্ছে মসকিউটো এন্ড সলিউশান, এডিস মশার লার্ভাসহ অন্যান্য লার্ভা ধ্বংস করার জন্য। আমি আরও রিসার্চ প্রোডাক্ট বিশ্বের প্রতিটি দেশের উন্নত দেশে খোঁজ নিচ্ছি। আরেকটি রিসার্চ প্রোডাক্ট আমরা পেয়েছি। সেটিও আমরা আনবো এবং দুটোর গুণগত মান আমরা দেখবো কোনটায় মশা বেশি মারা যাচ্ছে।’
ডেঙ্গুতে চট্টগ্রামে মৃত্যুর হার কমেছে উল্লেখ করে ডা. শাহাদাত বলেন, ‘এখন ডেঙ্গুর মৌসুম চলছে। যা বাংলাদেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে। চট্টগ্রামে আমরা দেখতে পাচ্ছি গত তিন চারদিনে মৃত্যুর হার শুন্যের কোটায় আছে। আমরা ডেঙ্গুর পাশাপাশি জনসচেতনার পাশাপাশি চিকুনগুনিয়াসহ অন্য মশাবাহিত যেসকল রোগ আছে সেগুলোর জন্য আমরা স্প্রে দিচ্ছি এবং সেই স্প্রে ঠিকমতো দিচ্ছে কিনা তা তদারকি করছি। এছাড়া জনগণের মাঝে লিফলেট বিতরণ করছি।’
নগরবাসীকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা জিনিস মনে রাখবেন, আমি হাজার হাজার কোটি টাকা জলাবদ্ধতা এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য এবং মশা মারার জন্য যদি খরচ করে যদি জনগণকে সচেতন করতে না পারি তখন এই নগরকে আপনি সুন্দর রাখতে পারবেন না। যার কারণে আমি বলেছি, আমি এসি রুমে বসে থাকার জন্য আসিনি। আমি রাস্তায় কাজ করার জন্য, জনগণের পাশে থাকার জন্য এসেছি।’
পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মচারীদের তদারকি করা হচ্ছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘আমি আপনাদেরকে বলেছি আমি নগরপিতা নই, নগরসেবক হিসেবে কাজ করতে চাই। জনগণের দুর্ভোগ যাতে না হয়। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর আমি বেশি জোর দিচ্ছি। ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি এবং হেলদি সিটি। যার প্রেক্ষিতে গত সরকারের আমলে প্রতিটি কাউন্সিলর প্রতিটি ওয়ার্ডে ৬০ থেকে ৭০ জন পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা রেখেছে। তারা ঠিকমতো জনগণের কাজ করছে কিনা সেটি তদারকির জন্য আমি তাদের নাম ধরে ডাকছি। আমি জনগণকে জিজ্ঞেস করছি তাদেরকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে দেখা গিয়েছিল কিনা। কারণ তাদের কাজটাই সেটা। এর জন্য তারা একেকজন ১৪ থেকে ১৭ হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। এজন্য প্রতিটা ওয়ার্ডে আমি যাচ্ছি। পূর্ব বাকলিয়া গিয়েছি, পশ্চিম বাকলিয়া গিয়েছি এবং আজকে চকবাজার ওয়ার্ডে এসেছি। এভাবে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাচ্ছি। আর জনগণ যাতে ময়লা-আবর্জনা রাস্তা-নালায় না ফেলে ডাস্টবিনে ফেলে সেই জনসচেতনতা বৃদ্ধি করছি।’
‘কাজেই আমি মনে করি যারা চট্টগ্রামের ৪১টি ওয়ার্ডে আছেন ৭০ লক্ষ লোক বাস করছেন, যে জায়গায় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কর্মচারীরা আপনাদের সেবা দিচ্ছেন না আপনারা আমাদের জানাবেন। ইনশাআল্লাহ জনগণের যেকোনো সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছি। ইতিমধ্যে আপনারা জানেন ডেঙ্গুর জন্য প্রথমদিন থেকে ম্যানেজমেন্ট সেন্টার এবং সেল সেন্টার খোলা হয়েছে। যেখানে ডেঙ্গুর যে টেস্ট সেটি বিনামূল্যে করে দিচ্ছি। আমরা ওইখানে ১০টি বেড রেখেছি। যেকোনো সময় মুমূর্ষু রোগী সেখানে চিকিৎসা নিতে পারবে।’
প্রতিটি ওয়ার্ডে গত সরকারের আমলে মেয়র-কাউন্সিলররা দুর্নীতি করেছেন অভিযোগ করে মেয়র বলেন, ‘আমি প্রতিটি ওয়ার্ডে গিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু দুর্নীতির চিত্র দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে আপনারা দেখেছেন শোলকবহর ওয়ার্ডের বিপ্লব উদ্যানে গিয়েছি সেখানে ২৫টি দোকান থেকে অলরেডি ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা লোপাট হয়ে গিয়েছে। অথচ সেখান থেকে পুরো এক বছরে করপোরেশন পেতো এক লাখ টাকা করে গত ১০ বছরে। অথচ ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা প্রতিবছর আয় করার কথা ছিল। কাজেই এই যে দুর্নীতি মেয়র এবং কাউন্সিলররা করেছেন আমি একে একে সব দেখতে পাচ্ছি। শুধু একটি ওয়ার্ড নয়, প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর এবং মেয়ররা মিলে দুর্নীতি করেছে এটার শ্বেতপত্র বের হওয়া উচিৎ এবং জনগণ সেটা জানা উচিত