চট্টগ্রাম নগরের ওমরগণি এমইএস কলেজে প্রচারে গিয়ে ‘হোঁচট’ খেল ছাত্রদল! বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম করতে সোমবার ক্যাম্পাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়তে হয় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় ছাত্রদল নেতাদের। বেলা ১২টার দিকের এ ঘটনায় দুপক্ষের হাতাহাতি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। এতে দুজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
ছাত্রদলের দাবি, কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী নয়, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের প্রেতাত্মারাই কলেজ ক্যাম্পাস উত্তপ্ত করছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই তারা সেখানে গিয়েছিলেন। যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষ অনুমতির বিষয়টি খোলাসা করেনি। তবে শিক্ষার্থীদের একজনের ভাষ্যমতে, ছাত্রদল নেতাদের আগমনের বিষয়টি জানা ছিল সবার। গণ্ডগোল বেধেছে ব্যানার টাঙিয়ে মতবিনিময় সভার প্রস্তুতি নেওয়ায়।
কী ঘটেছিল কলেজ প্রাঙ্গণে
খোঁজ নিয়ে গেছে, রবিবার রাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সৌজন্য আলাপের কথা জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত কলেজের এমন কয়েকজন শিক্ষার্থীকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতাদের আগমনের বিষয়টি জানায় ছাত্রদল। তারা ব্যানার না টাঙানো এবং সভা না করার শর্তে তাদের কথায় সায় দেয়। কলেজে আসার বিষয়টি কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও কলেজ কর্তৃপক্ষকে অলিখিতভাবে জানিয়ে রেখেছিল। সোমবার (১৮ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের একটি প্রতিনিধি দল কলেজ ক্যাম্পাসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা প্রচারণা শুরু করে। ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে ব্যানার টাঙিয়ে নেতাকর্মীরা জড়ো হতেই বাধা দেয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে তাদের কথাকাটি-হাতাহাতি হয়। এতে উভয়পক্ষের দুজন আহত হয়েছে বলেও প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এসবের একপর্যায়ে ককটেল ফাটানো হলে সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তবে কে বা কারা ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়েছে তা জানা যায়নি।
আবদুল কাদের নামে ওমরগণি এমইএস কলেজের স্নাতক শেষ বর্ষের এক শিক্ষার্থী সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়; তবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আমি এখন পর্যন্ত সমন্বয়কদের সঙ্গে আছি। গতকাল (রবিবার) রাতে ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী জানিয়েছিল ক্যাম্পাসে কোনো ব্যানার লাগাবে না; তারা শুধু মতবিনিময় সভা করবে। কিন্তু তারা কলেজ মাঠের একপাশে ছাত্রদলের ব্যানার টাঙিয়ে দেয়। এরপর মতবিনিময় সভা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ব্যানার দেখতে পেয়ে উত্তেজিত হয়। এসময় আমরা তাদের ব্যানার খুলে ফেলার জন্য বলি।’
ব্যানার লাগানো যাবে না বলার পর ছাত্রদলের নেতারা শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় কলেজে কোনো দলীয় ব্যানার টাঙানো যাবে না। এটি শুনার পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা চড়াও হয়। পরে উত্তেজিত হয়ে তারা গোলাগুলি করে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেককে মারধর করে। অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষের রুম থেকে বের করে শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়েছে। এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহতও হয়েছে। আমাদের কয়েকজনকে হুমকি দিচ্ছে মেরে ফেলবে।’
ওমরগণি এমইএস কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক শিক্ষক সিভয়েস২৪’কে বলেন, অনেক বেশি হট্টগোল হচ্ছিল; তখন ককটেলের মতো কিছু একটা ফুটিয়েছিল। পরে সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে চলে গেছে। একজনকে মারধর করা হচ্ছিল এবং সে মোটামুটি আহত হয়েছে। তবে আহত ব্যক্তি কলেজের শিক্ষার্থী নয়।
ছাত্রলীগের ‘প্রেতাত্মারা’ গণ্ডগোল পাকাচ্ছে
নগর ছাত্রদলের সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন ওমরগণি এমইএস কলেজের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেছেন, ক্যাম্পাসে সিনিয়র-জুনিয়র অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। এখানে আসলে সাধারণ শিক্ষার্থী না ছাত্রলীগের কিছু প্রেতাত্মা আছে; তারাই বিভিন্ন রকম ঝামেলা করার চেষ্টা করে। তারা প্রতিদিনই কলেজ ক্যাম্পাস উত্তপ্ত করে। আর আমাদের প্রোগ্রাম ছিল লিফলেট বিতরণ; আমরা শান্তিপূর্ণ প্রোগ্রাম করে কথাবার্তা বলেই চলে আসছি।
লিফলেট বিতরণের আগে কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে জানিয়ে নগর ছাত্রদলের এ নেতা আরো বলেন, ‘এখানে অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে সব শিক্ষক অবগত। লিফলেট বিতরণের কথা শিক্ষকদের আমরা আগেই জানিয়েছিলাম। আমরা কথা বলেই সেখানে গিয়েছি।’
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবেই সেখানে যাওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাষ্ট্র সংস্কারে যে ৩১ দফা; সেগুলোর লিফলেট বিতরণ করছিলাম। এটা আমাদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি। আমরা তো কলেজে মিটিং-মিছিল করতে যাইনি; শুধু লিফলেট দিতে গিয়েছি। এখানে আমাদের সাংগঠনিক কোনো কর্মকাণ্ড নেই।’
এদিকে, ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান তারেক এবং ছাত্র সংসদের জিএস আরশাদুল আলম বাচ্চুর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কলেজ কর্তৃপক্ষ কী বলছে?
ওমরগণি এমইএস কলেজের উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ রেজাউল করিম সিদ্দিক বলেন, ‘আজকে আমাদের চলমান একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা যথারীতি চলছিল। পৌনে ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করে। তাই আমরা চেষ্টা করছিলাম বহিরাগত কেউ থাকলে তাদের সরিয়ে দিতে। কিছু হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছিল। সকাল থেকেই এমনি এখানে পুলিশ ফোর্স ছিল। পরে এমন ঘটনা দেখে থানা থেকে পুলিশ ফোর্স বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করি। আমরা সেনাবাহিনীকে অবগত করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘গভর্নিং বডি থেকে কলেজে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে আমাদের কথা হচ্ছে সবাই আসবে যাবে। তবে এখানে যেহেতু রাজনীতি নেই; তাই সুষ্ঠুভাবে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে এমনটা করা হয়েছে। সেভাবেই আমরা চেষ্টা করছি।
আজ কোনো ধরনের দলীয় রাজনীতির কার্যক্রম ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলেজে তো বিভিন্ন দলমতের ভিন্নতা আছে। কিন্তু সবাই তো আমাদের সন্তান। আমরা চাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো হাতাহাতি-মারামারি না হোক। ক্যাম্পাসে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়।’
অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের অধ্যক্ষ মহোদয় আজকে ছুটিতে আছেন। উনাকে আগে থেকে বলেছে কিনা সেই বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই।’
গোলাগুলির বিষয়ে নিশ্চিত নন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক ভিড় ছিল। কে বা কারা কি করছে সেটা তো জানি না। বহিরাগতরা কেউ এসে করতেও পারেন। তবে হাতাহাতিটা নজরে পড়েছে।’
পুলিশ যা বলছে
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ছাত্রদলের তিন কেন্দ্রীয় নেতা স্থানীয় ছাত্রদল নেতাসহ কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে রাজনৈতিক প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। তখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন গিয়ে তাদের বলেন— কলেজ ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে৷ এতে উভয়পক্ষের দুইজন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।