Cvoice24.com
প্রচ্ছদচট্টগ্রাম
আ.লীগ নেতাকর্মীদের গণপিটুনি দিতে বললেন ওসি!
সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক
‘ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দেখলে গণধোলাই দিয়ে থানায় নিয়ে আসবেন।’ ‘থানায় না হলে আদালতে হলেও মামলা এস্টাব্লিশড করে দেওয়ার চেষ্টা করবো।’ ‘আমাদের কিছু বিএনপির লোক আওয়ামী লীগের সাথে মিশে গেছে। অরজিনাল ওয়ার্ডভিত্তিক একটা লিস্ট আমি চাই।’-এসব শুনে কোনো রাজনীতিবিদের বক্তব্য মনে হলেও এটি আদতে একজন পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য। তাও অধস্তন কোনো কর্মকর্তার নয়, খোদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বক্তব্য।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাদের এমন ‘নির্দেশনা’ দিয়েছেন দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব। সপ্তাহখানেক আগে তিনি সেখানে যোগদান করেছেন।
রবিবার (২৪ নভেম্বর) দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়ন পরিষদে স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। সেখানেই তিনি এ ধরনের ‘নির্দেশনা’ দেন। তাঁর এমন নির্দেশনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কেউ কেউ তাঁকে রাজনৈতিক ‘এজেন্ট’ আখ্যা দিয়ে তাঁর দেওয়া এমন বক্তব্যকে রাজনৈতিক ‘স্ট্যান্ডবাজি’ বলেও মন্তব্য করেছেন।
চট্টলার কন্ঠের হাতে আসা ওসি আহসান হাবিবের ওই বক্তব্যের ৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, পোশাক পরিহিত অবস্থাতেই দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন তিনি। তার দুপাশে এবং সামনে অবস্থান করছিলেন স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকর্মীরা।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, ‘বীর সন্তান শহীদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আমি আমার বক্তব্য শুরু করছি।’ এরপর তিনি যোগদান করার পর বিভিন্ন সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী কার্যক্রমের ফিরিস্তি তুলে ধরেন।
বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমার কথা হলো, বিএনপি বৃহত্তর একটি দল। দল-মত-গ্রুপ থাকতেই পারে। দল যাকে নির্বাচনের জন্য প্রতীক বরাদ্দ দেবে তার সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপনারা সবাই কাজ করবেন। আরেকটি কথা, বিএনপি ১৬ বছর সরকারের বাইরে ছিল। চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ এগুলো ছিল না।’’
আওয়ামী লীগের আমলে ধর্ষণে বিশ্বে নজির তৈরি হয়েছে দাবি করে ওসি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সময়ে ধর্ষণ হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণ হয়েছে। বিশ্বের নজির ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে হয়েছে। যারা সাধারণ মানুষকে ১৬ বছর ঘরছাড়া করেছিল, নির্যাতন করছিলো।’
বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলা করতে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়ে ওসি বলেন, ‘আমার এক ভাই বলেছে, মামলা নিচ্ছে না পুলিশ। আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি একটা সঠিক পরামর্শ দিব। প্রয়োজনবোধে কোর্টে আলাপ করবো মামলাটি কিভাবে এস্টাবলিশড করা যায়। তার জন্য আমি চেষ্টা করবো।’
‘খাঁটি’ বিএনপি নেতাকর্মীদের তালিকা চেয়ে ওসি আহসান হাবিব বলেন, ‘আমাদের কিছু বিএনপির লোক আওয়ামী লীগের সাথে মিশে গেছে। অরজিনাল ওয়ার্ডভিত্তিক একটা লিস্ট আমি চাই। অপরাধ ঘটলে সবকিছু থানার ওসির পক্ষে সম্ভব না। কিছু দায়িত্ব আপনাদেরও নিতে হবে। যে লোকটা সৎ এবং যোগ্য তাকে দিলে সুনাম হবে, বিএনপির সুনাম হবে। সেটা করতে হবে। চাঁদাবাজি করা যাবে না।’
আওয়ামী নেতাকর্মীদের গণধোলাই দিয়ে থানায় সোপর্দের আহ্বান জানিয়ে ওসি বলেন, ‘বিশেষ করে একটি কথা বলতে চাই, যারা ৫ আগস্টের আগে বিভিন্ন মানুষের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে, মারপিট করছে তাদের দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার মধ্যে গণধোলাই দিয়া থানায় নিয়া আসবেন। বিশেষ করে ছাত্রলীগ ঠাঁই পাবে না। আপনাদের এই পর্যায়ে যদি আওয়ামী লীগ থাকতো আপনাদের ঠ্যাং-ঠোং (হাত-পা) ল্যাংরা হয়ে যেতো।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা ভেবেছিলাম গত সরকারের পতনের পর আমরা নিরপেক্ষ প্রশাসন দেখবো। যারা কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করবে না। কিন্তু গতকাল ওসির বক্তব্য শুনে মনে হলো বিএনপির এজেন্ট তিনি। এটা কেমন কথা? এমন প্রশাসনের জন্য কি শিক্ষার্থীরা রক্ত দিয়েছে?
প্রকাশ্যে সরকারি পোশাক পরিহিত অবস্থায় ‘রাজনৈতিক’ বক্তব্য প্রসঙ্গে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি আহসান হাবিবের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটাতো ভুলবশত হয়ে যেতে পারে। এটা আর ইয়ে… করার দরকার নেই। আমার থানায় একসময় দাওয়াত রইলো। এটা অনিচ্ছাকৃত হয়ে গেছে। এটা আসলে একটু ইয়ে হয়ে গেছে আর কি। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে একটু দেখবেন।’
এ প্রতিবেদককে সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়ে সি বলেন, ‘আমরা জনগণের কাজ করবো ভাইয়া। এটা একটু ভুল হয়ে গেছে। এটা নিয়ে আর মতামত (নিউজ) কইরেন না ভাই।’
এ প্রসঙ্গে সরফভাটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ওসমান গণি বলেন, ‘ওসির বার্তাটি এরকম ছিল না। আমাদের সরফভাটায় ৫ আগস্টের পরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ সংযমের পরিচয় দিয়েছি। এগুলোর সাথে যারাই জড়িত হোক না কেন, আমরা বলেছি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আমরাও প্রশাসনকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছি। একইসুরে ওসি সাহেবও এই কথাটি বলেছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে কিছু চুরি-ডাকাতি হচ্ছে। এটা যারাই করুক না কেন ওদের বিষয়ে হয়তো বলেছে তাদেরকে ধরে বা মেরে হলেও থানায় আনেন। বক্তব্য দেওয়ার সময় হয়তোবা এরকম হতে পারে।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (ডিবি) রাসেল বলেন, ‘বক্তব্যটি আমি শুনিনি, তাই আমার নলেজে নেই। আমি একটু ওসির সাথে কথা বললে বুঝতে পারবো তিনি কি বলেছেন। অপেশাদার বা অপ্রাসঙ্গিক কোনো বক্তব্য সে দিতে পারে না। আমরা আগে যাচাই করে দেখবো সে বলেছে কিনা। বললে আমরা সতর্ক করবো এ ধরনের অপেশাদারসুলভ শব্দ যেন জনসম্মুখে না বলেন।’